সিজারের পর প্রসূতির পেটে গজ কাপড়, টিস্যু ও ক্লিপ রেখে সেলাই
ফরিদপুরে সিজারের পর প্রসূতির পেটে গজ কাপড়, টিস্যু ও ক্লিপ রেখে সেলাইয়ের অভিযোগ উঠেছে মধুখালীর সুমি প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড নার্সিং হোমের বিরুদ্ধে। পেটে রক্ত জমাট বেঁধে ও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই প্রসুতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করছেন স্বজনরা।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ১০ এপ্রিল পেটে বাচ্চা নিয়ে উপজেলা সদরের সুমি প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড নার্সিং হোমে চিকিৎসা নিতে যান উপজেলার বাগাট ইউনিয়নের মিটাইন গ্রামের মনিরুল ইসলামের স্ত্রী রত্না বেগম।
এক পর্যায়ে তাকে সিজার করার পরামর্শ দেন ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী সুমি আক্তার। পরে এই রাতেই মাগুরা থেকে এক চিকিৎসক এনে তার অপারেশন করেন।
ঘটনার ১০ দিন পরে গত ২৩ এপ্রিল ওই প্রসূতির রক্তক্ষরণ শুরু হলে তাকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওইদিনই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।
এরপর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ২৪ এপ্রিল মারা যান তিনি। প্রসূতি রত্না বেগমের স্বামী মো. মনিরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, গত ১৩ এপ্রিল মধুখালীর সুমি প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড নার্সিং হোমে আমার স্ত্রীর সিজার করানো হয়। তখন আমার পুত্র সন্তান হয়। তবে বাচ্চা অসুস্থ হওয়ায় তাকে ফরিদপুর শিশু হাসপাতালে নেওয়া হয়।
কয়েকদিন পরে আমার স্ত্রীর প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তখন তাকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে ডাক্তার দেখে বলেন, সিজারের পরে যে সেলাই করা হয়েছে তার মাঝে ফাঁকা রয়েছে, সুতো মিলে নাই, ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে পচে গেছে।
এরপর ডাক্তারের পরামর্শে রোগীকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, যতক্ষণ ব্লাড দেয়া হবে, ততক্ষনই রোগী বাঁচবে । আমি তখন ডাক্তারের কাছে সমস্যার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আমাকে বলেন, এই রোগীর সিজারের পর সেলাই ভালো হয়নি, ফুটো রয়েছে।
এরপর আল্ট্রাসনোগ্রাম করে অপারেশন করা হলে দেখা যায়, ভেতরে তুলো, গজ কাপড় ও একটা ক্লিপ রয়েছে। এছাড়া বাচ্চার নাড়িও সঠিকভাবে কাটা হয়নি, ভেতরে রয়ে গেছে।
রোগীর স্বজন মো. হাসান বলেন, ঢাকায় নিয়ে পরীক্ষা করানোর পর চিকিৎসকরা জানান, পেটের মধ্যে গজ, তুলা, ক্লিপ পাওয়া গেছে। এগুলো পেটের মধ্যে রেখেই সেলাই করা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী সুমি আক্তার বলেন, আমাদের ক্লিনিকে ওই রোগীর সিজার করেছেন ডা. মাসুদুল হক। সিজারের পরেও রোগী ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন।
এরপর সুস্থ অবস্থায় চারদিন পর বাড়ি ফিরে যান। এরপর রোগী ও তার স্বজনরা আমাদের কাছে আসেননি এবং কিছুই জানাননি । এমনকি রোগীর মৃত্যুর পরও আমাদের কিছু জানাননি। তবে লোক মারফত জানতে পেরেছি তিনি মারা গেছেন।
তবে রত্না বেগমকে সিজার করার বিষয় অস্বীকার করেন ডা. মাসুদুল হক। তিনি বলেন, গত দেড় বছর মধুখালী যাওয়া হয় না।
আমি কীভাবে সিজার করবো?। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান, মধুখালীতে অধিকাংশ ক্লিনিকে নেই কোন ডাক্তার, নেই ডিপ্লমা নার্স। এরা সিজার নিজেরাই করে।