হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়ককে নিরাপদ করতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
রবিবার দুপুরে রাজধানীর রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। হাইওয়ে পুলিশের ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়। উদযাপন অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান, এমপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমদ, এমপি, বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা, এমপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন খান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের মহাসচিব ওসমান আলী, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এর সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে পরিবহন মালিক-শ্রমিক এবং পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন ভিশন ২০২১, রূপকল্প ২০৪১, এসডিজি বাস্তবায়ন এবং প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে সামনে রেখে বর্তমান সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় গত এক দশকে দৃশ্যমান উন্নয়ন সাধন করেছে। এর মধ্যে পদ্মা সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, উড়াল সড়ক, মেরিন ড্রাইভসহ ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে, চার লেন বিশিষ্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক উল্লেখযোগ্য।
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, এবারের ঈদুল ফিতরে মানুষের নিরাপদে ঘরে ফেরা এবং মহাসড়কে যানজট নিরসন, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড রোধে হাইওয়ে পুলিশ প্রশংসনীয় অবদান রেখেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের আঞ্চলিক ও জাতীয় মহাসড়কে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করা হাইওয়ে পুলিশের অন্যতম দায়িত্ব। এছাড়া, মহাসড়কের সকল অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা বন্ধ করার পাশাপাশি যানজট, দুর্ঘটনা হ্রাস করে জনগণকে কাঙ্খিত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে হাইওয়ে পুলিশে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে।
শাজাহান খান বলেন, ২০১৫ সালে বিএনপি এবং জামাত পেট্রোল বোমা দিয়ে আগুন সন্ত্রাস করেছিল। তখন মানুষকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে, যানবাহন পড়ানো হয়েছে। তখন পরিবহন শ্রমিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে। তিনি এ ধরনের পরিস্থিতির যেন আর মুখোমুখি হতে না হয় সেজন্য সকলকে সচেতন থাকার আহবান জানান।
বেনজীর আহমেদ বলেন, অনেক সময় চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। ফলে অনেক মূল্যবান জীবন ও সম্পদহানি ঘটে। তিনি বলেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচলও সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, আমাদেরকে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, দেশে একুশ হাজার কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এর নিরাপত্তা প্রদানের জন্য হাইওয়ে পুলিশের সরঞ্জাম ও জনবল বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট মালিক, স্মার্ট শ্রমিক ও স্মার্ট পরিবহন গড়ে তুলতে হবে। তিনি পরিবহন সেক্টরে সকল অরাজক পরিস্থিতি মোকাবেলায় কাজ করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।
মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, হাইওয়ে পুলিশকে স্মার্ট বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে যাতে তারা কুইক রেসপন্স করতে পারে। তিনি বলেন, হাইওয়ে পুলিশে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।
এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন , সড়কে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সড়কও ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। এছাড়া, হাইওয়ে পুলিশের সদস্যদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে আইজিপি বলেন, হাইওয়ে পুলিশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে মহাসড়কের শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ফলে মহাসড়কেন্দ্রিক চোরাচালান, মানব পাচার, মাদকদ্রব্য পরিবহন, রপ্তানিপণ্য চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।
চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত ঈদুল ফিতরের সময় বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা এবং হাইওয়ে পুলিশ অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশের প্রতিটি সড়ক, মহাসড়ক সচল রেখেছে। ফলে মানুষ নির্বিঘ্নে স্বস্তিতে ঈদে বাড়ি যেতে পেরেছে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আইজিপি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক অনুগ্রহে হাইওয়ে পুলিশের জন্য নতুন থানা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সার্বক্ষণিক নজরদারির লক্ষ্যে ‘হাইওয়ে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড হতে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত ২৫০ কিলোমিটার এলাকার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ক্যামেরা ও ডেটা সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে।
পুলিশ প্রধান বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধকারী। দেশের সকল প্রয়োজনে নিজেদের জীবনকে তুচ্ছ করে মানুষের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য। দেশে আগুন সন্ত্রাস দমন, জঙ্গিবাদ উৎখাত ও কোভিড-১৯ মোকাবেলায় আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে লড়াই করেছি। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষায় আমরা বদ্ধপরিকর।
মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, মহাসড়কে চুরি, ডাকাতি ও মাদক দমনসহ দুর্ঘটনা রোধে হাইওয়ে পুলিশের সকল সদস্য অত্যন্ত আন্তরিকতা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করছে। পাশাপাশি বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক ও আত্মমর্যাদাশীল ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণেও কাজ করে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে ‘সড়ক সারথি’ স্মরণিকা এবং ‘তদন্ত ম্যানুয়েল’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এছাড়া, ‘হ্যালো এইচপি’ মোবাইল অ্যাপ উদ্বোধন করা হয়। হাইওয়ে পুলিশের কার্যক্রম সম্পর্কে একটি ডকুমেন্টারি প্রর্দশন করা হয়। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানকে স্মৃতিময় করে রাখতে কেক কাটা হয়।
দায়িত্ব পালনকালে জীবন উৎসর্গকারী হাইওয়ে পুলিশের শহিদ কনস্টেবল রাব্বী ভূঁইয়ার স্ত্রী ও সন্তানকে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা স্মারক ও উপহার প্রদান করা হয়।